নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ ‘চলো গ্রন্থগারে চলো দেখি সম্ভনার আলো’ এই আদর্শ শিক্ষার আলোর বানি নিয়ে পথ চলা বরিশাল বিভাগীয় সরকারি গণগ্রন্থগার ভবনটি বৈশ্বিক মহামারি করোনা ঝড়ের মুখে পড়ে গত ৬ মাসে বই প্রেমিক পাঠকদের কাছ থেকে আলোকিত প্রতিষ্ঠানটি বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। নিত্য নতুন নামি লেখকদের দামী দামী শিক্ষা আর্জনের আলোকিত বই রয়েছে বুকসেলে, চেয়ারগুলো পড়ে রয়েছে সাজানো টেবিলে, ব্যবহার না করার কারনে কম্পিউটারগুলো হচ্ছে নষ্ট,আসবাব পত্র পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতার মধ্যে দিয়ে হাতেগোনা একজন কর্মকর্তা ও কয়েকজন কর্মচারী প্রতিদিন কর্মস্থলে হাজিরা দিয়ে সরকারী চাকুরী নিয়ম বিধান মেনে গনগ্রন্থগারে সময় পাড় করে যাচ্ছেন। গণগ্রন্থগার ভবনের বাহিরে জরাজীর্ণতার চিত্র ফুটে উঠেছে ভিতরে রয়েছে ফিটফাট। চতুর্থতলা ভবনের প্রতিটি কক্ষে বুক সেলে সাজানো রয়েছে নামি দামী লেখকের গল্প,উপন্যাস,কবিতা সহ বিভিন্ন ধরনের দেশ-বিদেশের বই। অপর কক্ষে রয়েছে শিশুদের জন্য গল্প, কবিতা ও জ্ঞানভিত্তিক বিভিন্ন বইয়ের পাশাপাশি বিজ্ঞান ভিত্তিক মেধা বিকাশের কোডিং ট্রয় ব্রিজ খেলার সরঞ্জাম। এখানে আরো রয়েছে বিভিন্ন জাতীয় ও স্থানীয় পেপার পত্রিকার ফাইল,রবির সহযোগীতায় ইন্টারনেট যুক্ত কম্পিউটার ক্লাস রুম যা এখানে বসে সহজেই ব্যবহার করার পরিবেশ রয়েছে।
স্থাপিত হওয়ার পর থেকে গত ১৪ বছরের এই সরকারী গণগ্রন্থগার লাইব্রেরীতে বিভিন্ন সময়ে জমা হয়েছে ৮০ হাজার ১৩টি বই। যেহারে বই লাইব্রেরীতে এসে জমা হয়েছে সেহারে বই পড়ার পাঠক প্রেমিক সংক্ষা এখানে বাড়েনি। এখানে যেসকল পাঠকের চাপ রয়েছে তারা সকলেই পত্রিকার পাতা উল্টিয়ে চাকুরীর সন্ধানের জন্য খবরের কাগজ পড়তে ও দেখতে আসেন অধিকাংশ শিক্ষিত বেকার যুবক শ্রেনির সদস্যরা।
শুধুমাত্র এই লাইব্রেরী ভবনটি আনন্দে-ফূর্তিতে খেলাধুলার মাধ্যমে মাতিয়ে রাখেন পাঠক শিশু সদস্যরা। তবে এখানে যে পরিমান জানাশোনা ও জ্ঞানের পড়ার মত বই রয়েছে শুধু প্রচার-প্রচারনার অভাব থাকায় তার বিপরিতে বই প্রেমিকের সংক্ষা তেমনভাবে বাড়াতে পারেনি । সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া ২০০৬ সালের ১৭ই সেপ্টেম্বর নগরের বিএম কলেজ সড়ক ও বিএম কলেজের বিপরিতে তিনতলা বিশিষ্ট সরকারি গণগ্রন্থগার ভবন উদ্ধোধন করে যাওয়ার পর থেকে প্রর্যায়ক্রমে বিভিন্ন সময়ে পাঠকদের জন্য বই আনা হলেও এখানে শুধু কিছু কলেজের ছাত্র-ছাত্রী ছাড়া তেমন কোন পাঠকের পা পড়েনি। অপরদিকে বই পড়ার পিছনে সময় নষ্ঠ না করে এক শ্রেণির শিক্ষিত বেকার যুবক ছেলে-মেয়েরা পত্র-পত্রিকার পেপার ফাইল দেখতে আসেন আর চাকুরীর তথ্যের সন্ধান করেন আসলে এখানে এই সংক্ষাটা একটু বেশি বলে কর্মচারীরা জানান।
অন্যদিকে শুধু তৃতীয় তলায় শিশুদের জন্য বই পড়ার পাশাপাশি তাদের বৈজ্ঞানিক জ্ঞান অর্জনের জন্য রাখা আছে কোডিং ট্রয়ব্রিজ খেলার সরঞ্জাম। এছাড়া এখানে ৮০ হাজার ১৩টি বই সহ শিশুদের খেলার সরঞ্জামের কারনে তিন সিপর্টে প্রতিদিন গড়ে ৫শত বিভিন্নস্থরের পাঠকের উপস্থিতের কথা বলা হলে মাসে গিয়ে দাঁড়ায় প্রায় ৩০ হাজার পাঠক। বাস্ববে তত পাঠকের উপস্থিতি এখানে নেই।
গণগ্রন্থগারে রেজিস্ট্রেট জানায় তাদের গড়ে প্রতি মাসে সর্বস্তর মিলিয়ে প্রায় ১০ হাজার পাঠক আসা-যাওয়া রয়েছে। এব্যাপারে বরিশাল বিভাগীয় সরকারি গণগ্রন্থগারের সহকারি পরিচালক খালিদ মোহাম্মদ সাইফুল্লাহ বলেন, আমাদের ভবনের বাহিরটা জরাজীর্ণতার মত কিন্তু ভিতরের সকল কিছুই ঠিক আছে। ভবনের বাহিরটা কাজ করার জন্য ইতি মধ্যে গণপূর্ত দপ্তরের সাথে কথা হয়েছে শিঘ্রই কাজ করবেন তারা। এছাড়া এখানে বই পড়ার জন্য অত্যন্ত নিরিবিলি শান্ত পরিবেশ রয়েছে। আমারা তিন সিফর্টে কেরিয়ার গাইর্ড সেশন, বিভিন্ন দিক নির্দেশনা দেয়া সহ সকল পাঠকের সাথে মতবিনিময় করে থাকি। অন্যদিকে আমরা এখানে শিশুদের জন্য সাধারন জ্ঞান, বিজ্ঞান রেফারেন্স পাঠক তৈরী করার কাজ করে যাচ্ছি। এখানে গড়ে প্রতিদিন ৮০ জন শিশুর উপস্থিতি রয়েছে বলে তারা দাবী করেন। এছাড়া এই গণ গ্রন্থগারে বই পাঠকের চেয়ে তরুন চাকুরী প্রত্যাশি ছাত্র-ছাত্রীর সংক্ষা একটু বেশি বলে তার মনে হয়। তবে যেহেতু সামনে বিএম কলেজের মত একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে সেখানকার কিছু ছাত্র-ছাত্রী এখানে বই পড়তে আসে কিন্তু এর সংক্ষা একটা বেশি নয়। তিনি আরো বলেন, বরিশালের গণগ্রন্থাগারের প্রচার-প্রচারনা একটু কম থাকার কারনেই হয়ত পাঠকের সংক্ষা কম হচ্ছে। সামনে যাতে এর সংক্ষা আরো বৃদ্ধি করা যায় করোনা পরবর্তীতে সরকারীভাবে গ্রন্থগার খোলা হলে তা করা হবে। অপরদিকে গণগ্রন্থগারে সহকারী পরিচালক, হিসাব রক্ষক ও বুক সাটারের পদগুলো খালী পড়ে রয়েছে। এখন মাত্র ১৫ জন জনবল নিয়ে এই গণগ্রন্থগারটি পরিচালিত হচ্ছে।
Leave a Reply